গ্রামবাংলার জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খেলা প্রায় বিলুপ্তর পথে। তাই লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় আয়োজন করা হয় গ্রামবাংলার জনপ্রিয় হাঁস খেলা ও কলাগাছ খেলা। খেলা দেখতে পুকুর পাড়ে বিভিন্ন বয়সী নারী ও পুরুষের ঢল নামে। প্রচণ্ড তাপদাহ উপেক্ষা করে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় পুকুর পাড়।
রবিবার দুপুরে উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের জোড়া পুকুর বাজার কমিটির আয়োজনে গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় এ হাঁস ও কলাগাছ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকে উপজেলার জোড়াপুকুর এলাকার আতোয়ার মিয়ার পুকুরের চারপাশে এই হাঁস খেলা দেখতে ভিড় জমায় কয়েক গ্রামের বিভিন্ন বয়সের কয়েক হাজার নারী-পুরুষ। খেলা দেখতে আসা মানুষগুলোর চোখে মুখে ছিল বাধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, খেলা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে হাজারও মানুষ।
এ সময় দীঘির চারপাশে অসংখ্য মানুষের করোতালীতে শুরু হল হাঁস খেলা। পুকুরের মাঝে ছেড়ে দেওয়া হয় দুইটি হাঁস। এর পর রেফারির বাঁশির শব্দে পুকুরে ঝাঁপ দেয় ৮ যুবক। সেই হাঁস ধরতে শুরু হয় হইচই।
পুকুরের পানিতে যে প্রথম হাঁস ধরতে পারবে সে জয়ী।
স্থানীয়রা জানান, এটি গ্রামবাংলার জনপ্রিয় খেলা। ওই বড় দিঘীর পানিতে প্রথমে দুইটি করে হাঁস ছেড়ে দেয়া হয়। প্রতিবার ৮ জন করে ওই দিঘীতে নামে হাঁস ধরার জন্য। যে প্রথম ধরতে পারে ওই হাঁসটি তার।
ধারাবাহিকভাবে একশত’ মানুষ এই হাঁস ধরার খেলায় অংশ নেয়। অপর দিকে তিনটি কলাগাছে ছয়জন অংশ নিয়ে যথা সময়ের মধ্যে কলা গাছে উঠতে না পারলে তারা বাতিল হয়ে যায়। কলাগাছে নিচ থেকে উপর পর্যন্ত তেল, মবিল ও পিছলা কিছু জিনিস মিশিয়ে রাখা হয়। যাতে কেউ সহজে উঠতে না পারে। সাঁতরিয়ে এই হাঁস ধরার খেলা ও কলাগাছ খেলা দেখতে উপচে পড়া মানুষের ভিড় দেখা যায়। এতে নারীদেরও ভিড় লক্ষণীয় ছিল।
এ হাঁস ও কলাগাছ খেলার উদ্বোধন করেন ফকিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন জোড়াপুকুর বাজার কমিটির সভাপতি ফজলার রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা সামসুল ইসলাম, ইউপি সদস্য মফিজুল ইসলাম, সাবেক ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম। পরে প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
জোড়াপুকুর বাজার কমিটির সভাপতি ফজলার রহমান বলেন, বাপ দাদার আমলের সেই খেলা গুলো আবার নতুন প্রজন্মদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া জন্যই এই আয়োজন।
এবিষয়ে ফকিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরল ইসলাম বলেন, হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এবং যুব সমাজকে মাদক ও অপরাধ মুক্ত রাখতে এসব ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় খেলার আয়োজন প্রশংসনীয়। প্রতি বছর এই হারিয়ে যাওয়া খেলাগুলো আয়োজন করা উচিৎ।