পিন্টু কুমার সরকার,স্টাফ রিপোর্টারঃ গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও ট্রেন্ডার ছাড়াই রাস্তার দুই ধারের গাছ কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে দুই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির মাধ্যমে দামোদরপুর ও বনগ্রাম ইউনিয়নের রাস্তার প্রায় দুই শতাধিক গাছ বিক্রি করেন সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও এম এ শাহীন আলম সরকার। গোপন প্রক্রিয়ায় গাছ কর্তনের ঘটনা জানাজানির পর দায় নিতে নারাজ দুই ইউপি চেয়ারম্যান। উল্টো তারা মিথ্যা মামলা দিয়ে নিরাপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানী করছেন বলে অভিযোগ সমিতির সদস্য ও জমি মাালিকসহ এলাকাবাসীর।
গত ৩০ মার্চ দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ শাহীন সরকার বাদি হয়ে সাদুল্লাপুর থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। দুই মামলায় এজাহার নামীয় ১০ জন এবং অজ্ঞাত আরও ৫/৭ জনকে আসামি করা হয়। এদিকে, অবৈধভাবে ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক গাছ কেটে বিক্রি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানীর ঘটনার প্রতিকার চেয়ে সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। গত ১৩ এপ্রিল ভুক্তভোগীদের পক্ষে লিখিত অভিযোগ করেন দামোদরপুর ইউপির ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. জনাব আলী।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, দামোদরপুর ইউনিয়নের পশ্চিম দামোদরপুর রাস্তার দুই ধারে গত ১৫ বছর আগে শতাধিক ইউক্লিপটাস গাছ রোপন করে সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি। সম্প্রতি এসব গাছ বড় হওয়ায় তা বিক্রির সিন্ধান্ত নিয়ে প্রয়োজনীয় অনুমোদনের জন্য ইউপি চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে (রেজুলেশনসহ) অবগত করে সমিতির সদস্যরা। কিন্তু চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত না করেই ওই রেজুলেশনে সিল-স্বাক্ষরে সুপারিশসহ গাছ বিক্রির অনুমতি প্রদান করেন। শুধু তাই নয়, চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম নিজেই ৬৩টি ইউক্লিপটাস গাছ এক লাখ ৮০ হাজার টাকায় স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী সেলিম মিয়ার কাছে বিক্রি করেন।
গত ৩০ মার্চ সকালে চেয়ারম্যানের নির্দেশে কাঠ ব্যবসায়ী সেলিম মিয়া শ্রমিক আজাদ মিয়া, আবেদ মিয়া, আবাদু মন্ডল ও মাহাবুবসহ তার লোকজন পাঠিয়ে গাছগুলো কর্তন শুরু করে। তাৎক্ষণিক জমি মালিক ও সমিতির সদস্যরা গাছ কাটতে বাঁধা দিলে শ্রমিকরা জানায় তারা চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে এসব গাছ কাটছেন। গাছ কাটার সময় রাস্তার পাশের অনেক জমির কাচা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরে জমি মালিক ও স্থানীদের বাঁধার মুখেই চারটি ইউক্লিপটাস গাছ তড়িঘড়ি করে কেটে নিয়ে সটকে পড়েন শ্রমিকরা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরির্দশনের আগেই ইউপি চেয়ারম্যান কর্তন করা গাছের গুড়ি কাঠ ব্যবসায়ী সেলিম মিয়ার ‘ছ’ মিল থেকে উদ্ধার করে পরিষদে নিয়ে আসেন।
অপরদিকে, বনগ্রাম ইউনিয়নের মন্দুয়ার গুচ্ছগ্রাম থেকে চৌকিদারের খেয়াঘাট পর্যন্ত সড়কের দুই ধারের দেড় শতাধিক ইউক্লিপটাস গাছ কেটে বিক্রির অভিযোগ ওঠে চেয়ারম্যান শাহিন আলম সরকারের বিরুদ্ধে। চেয়ারম্যান শাহীন আলম এসব গাছ স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী ছামছুল ইসলামের নিকট বিক্রি করেন। গাছ কাটার ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে চেয়ারম্যানের ভূমিকা নিয়ে নানা গুঞ্জণসহ সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে চেয়ারম্যান শাহীন আলম নিজের দায় এড়াতে স্থানীয় নিরাপরাধ ৫/৭ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাদুল্লাপুর থানায় গাছ কাটার অভিযোগে মিথ্যা একটি মামলা করেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীদের পক্ষে লিখিত অভিযোগকারী জনাব আলী জানান, গাছ কাটা ও বিক্রির সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই। তিনি জমি মালিক হিসেবে গাছ বিক্রির সময় ১০% টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু সেই টাকা না দিয়েই অবৈধভাবে গাছ কেটে নেয়ার ঘটনা ঘটে। ঘটনা জানাজানির পর গত ৩০ মার্চ রাতে গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বাদি হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় আমি ও আমার ছেলে সুমন এবং সমিতির সদস্য ছামছুল মিয়া ও তার ছেলে সুমনকে আসামি করা হয়। মুলত চেয়ারম্যান নিজে বাঁচতে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে হয়রানী করছে। এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও প্রশাসনের নিকট লিখিত অভিযোগ করে প্রতিকার দাবি করেন তিনি।
পশ্চিম দামোদরপুর সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির সভাপতি নাছির মিয়া জানান, চেয়ারম্যানের পরামর্শে গাছ কাটার সিন্ধান্ত নিয়ে রেজুলেশনসহ তার কাছে লিখিত আবেদন করা হয়। পরে তিনি গাছগুলো এক লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করে নিজে ৭০ হাজার টাকা পকেটে রাখেন। গাছ কাটার নিয়ম প্রক্রিয়া সম্পর্কে তাদের জানা না থাকলেও চেয়ারম্যানের নির্দেশ ও আশ্বাসে গাছগুলো কর্তন করা হয়। কিন্তু গাছ কাটার বাঁধা পেয়ে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে উল্টো মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে হয়রানী করছেন।
একই গ্রামের বাসিন্দা ও সমবায় সমিতির সদস্য ছামছুল মিয়া জানান, গাছ কাটার বিষয়ে আগে থেকেই সমিতির কিছু সদস্য এবং সাবেক সভাপতি আব্দুল জোব্বারের সঙ্গে চেয়ারম্যানের গোপন আতাঁত ছিলো। অবৈধভাবে গাছ কেটে টাকা আত্মসাত চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে চেয়ারম্যাান মিথ্যা মামলাসহ নানা কৌশলের আশ্রয় নেয়। বর্তমানে মিথ্যা মামলার এজাহার নামীয় ব্যক্তিসহ অনেক পরিবার ও বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এছাড়া মামলার ভয়ে অনেকের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। চেয়ারম্যানের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি দ্রুত ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবি করেন।
যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও শাহীন আলম সরকার। তাদের দাবি, গাছ কাটার সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই এবং সমিতির লোকজনের সাথেও তাদের কথা হযনি। অবৈধভাবে রাস্তার গাছ কেটে বিক্রির ঘটনা জানার পর জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব হিসেবে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রতিপক্ষ একটি মহল তাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তবে কাউকে ফাঁসাতে এই মামলা করা হয়নি।