আসাদুল ইসলাম সবুজ ।। চলমান পুনাক শিল্প বাণিজ্য মেলা এখন লালমনিরহাটবাসীর পকেট কাটার মেলায় পরিনত হয়েছে। রেলওয়ে মাঠে মেলার কারণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিভিন্ন দিবসে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানগুলো করা হচ্ছে না। ফলে অনেকটাই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। সেই সাথে ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়া বিঘ্ন ঘটছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধে রেলওয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের রয়েছে গর্বিত অবদান। দেশ স্বাধীনের পর থেকে রেলওয়ের উদ্যোগেই প্রতিবছরে লালমনিরহাট রেলওয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী ফুটবল খেলার মাঠে মহান বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারিসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। কিন্তু ৫০ বছরের মধ্যে এবারেই প্রথম ওই মাঠের মহান স্বাধীনতা দিবসের কোন অনুষ্ঠান হচ্ছে না বলে ক্ষুব্ধ এলাকার মুক্তিযুদ্ধাসহ সাধারণ মানুষ। প্রতিদিন বিকাল হলে উক্ত মাঠ ফুলবল ও ক্রিকেট খেলোয়াড়দের খেলাধুলায় মুখরিত হয়ে উঠলেও প্রায় ২ মাসের বেশি সময় ধরে খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
জানা গেছে, চলতি বছরের ১২ জানুয়ারী থেকে লালমনিরহাট রেলওয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী ফুটবল খেলার মাঠে পুনাক বাণিজ্য মেলা শুরু হয়। পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) ব্যানারে মেলাটি পরিচালনা’র দায়িত্বে রয়েছেন রংপুরের প্রিন্স ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট নামক একটি প্রতিষ্টান। মাত্র ১ মাস মেলা হওয়ার কথা থাকলেও উক্ত প্রতিষ্টানটি খেলার মাঠ দখল করে চালাচ্ছেন মাসের পর মাস।
এই মেলার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়াসহ কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা প্রকাশ্যে মাইক বাজিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে পুরো জেলা জুড়ে। মেলায় লোভনীয় অফারে যেসব পন্য বিক্রি করা হচ্ছে তা অতি-নিম্নমানের। দামও অনেক বেশি। মেলার ভিতরে যেসব খাদ্য সামগ্রী রয়েছে তা পচা ও বাসি। হরেক রকমের রং মিশানো খাবারে। যা স্বাস্থ্য সম্মত নয়। সেখানে প্রশাসনের নেই কোন অভিযান। মেলায় যেতে টাকা জোগান দিতে উঠতি বয়সের ছেলেরা জড়িয়ে পড়ছেন বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। ফলে শহরে প্রতিদিনেই বাসা বাড়ি, দোকান পাট, গাছের সুপারি, ক্ষেতের আলু ও পৌরসভার বসানো পানির পাম্পগুলো চুরি হচ্ছে।
অপরদিকে মেলা মাঠের একশত গজ হতে পাঁচশত গজের মধ্যে ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রেলওয়ে কর্মকর্তা কর্মচারির আবাসিক রেল কোয়াটার, ষ্টোরপাড়া জামে মসজিদও রয়েছে। মেলায় দিন রাত ২৪ ঘন্টার মধ্যে রাত এক টার পর হতে সকাল ৯ টা পর্যন্ত মেলায় সমাগম ও মাইকের বাজনা সাময়িক বন্ধ থাকলেও বাকি সময় লোকসমাগম মাইকের আওয়াজে শহরবাসী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীগণ এবং সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জোর দাবী তুলে জানান, এই মুহুর্তে মেলা বন্ধ করা হোক।মেলার কারণে এই প্রথম ৫০ বছরে রের্কড ভেঙ্গে রেল বিভাগ এবছরে আর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মাঠে স্বাধীনতা দিবসের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান করতে পারছে না। আসছে ২৬ মার্চ, স্বাধীনতা দিবসের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানগুলো অন্য কোন মাঠে পালন করা হবে বলে তারা অনেকটাই ক্ষুব্ধ।
এ বিষয়ে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মেজবাহ উদ্দিন বলেন, এটি রেল কর্তৃপক্ষ ঠিক করছেন না। মাঠ বন্ধ করে মাসের পর মাস মেলা মোটেই ঠিক নয়। প্রশাসন কি করছেন, বুঝি না।
এ বিষয়ে রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজার শাহ্ সুফী নুর মোহাম্মদ বলেন, বিকল্প উপায়ে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করতে কমিটি করে দিয়েছি। তারা কি সুপারিশ করে অপক্ষোয় রয়েছি। পুনাক মেলার কারণে ওই মাঠে এবার স্বাধীনতা দিবস হচ্ছে না।