আসাদুল ইসলাম সবুজ ॥ লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি’র (লা-পবিস) একশ্রেণির কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার গ্রাহকরা বিক্ষুব্ধ। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালালদের কর্মকান্ডে সরকারের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা কার্যত ভেস্তে যেতে বসেছে।
বর্তমান সরকার কৃষিখাতে কোটি কোটি টাকা প্রণোদনা দিলেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি’র অনিয়ম ও দুর্নীতির কবলে শতাধিক কৃষকের চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অথচ লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অফিসের বড়কর্তা বাবু ইমরান হোসেন সেচপাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগের নামে ২০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েও টালবাহনার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ সুত্রে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি শুরুতেই গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে সেবা দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হলেও এখন তা ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। লালমনিরহাটবাসীর হাতের নাগালে হাড়ীভাঙ্গাস্থ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি’র যাবতীয় কার্যক্রম চালু হওয়ায় গ্রাহকদের প্রতিটি পদক্ষেপে অফিসের কাউকে না কাউকে ঘুষ দিতে হচ্ছে। এখন ঘুষ দিয়েও সময়মত গ্রাহক সেবা পাওয়া যেন স্বর্গের চাঁদ পাওয়া। সবমিলিয়ে এখানে যেন টাকা দিলে কাজ, না দিলে নাই। হাড়ীভাঙ্গাস্থ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি’র এখন দালালে ভরা।
এসব দালালের সাথে বড়কর্তা বাবু ইমরান হোসেনের গভীর সক্ষতা রয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে কিছু সময় নীরবে দাঁড়ালে বুঝা যায়, দালাল আর অফিসের কোন কর্তা কত টাকা ঘুষ দিয়েছে। নানান রকম গ্রাহকের নানান রকমের ঘুষের বয়ান। কিন্তু এবার ঘুষের টাকা দিয়েও বিপাকে পড়েছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটী ইউনিয়নের কিশামত চোঙ্গাডারা গ্রামের এক সেচপাম্প শহিদুল ইসলামসহ শতাধিক কৃষক। উক্ত সেচপাম্পের আওতায় শতাধিক কৃষক রয়েছে। পুরাতন সংযোগ পেতে শহিদুল ইসলাম সকল কৃষকের কাছে চাঁদা আদায় করে অফিসের বড়কর্তা বাবু ইমরান হোসেনকে সেচপাম্পের সংযোগ চালু করতে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েও দিনের পর দিন টালবাহনার শিকার হচ্ছেন। এখন ভরা মৌসুমে শুনছেন সংযোগটি আর পাবেনেই না।
ওই এলাকার কৃষকরা জানান, তৎকালীন কুড়িগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন সদর উপজেলার হারাটী ইউনিয়নের কিশামত গ্রামের কৃষক জহির উদ্দিন একটি সেচপাম্প সংযোগ নেন। সংযোগ নেওয়ার পর থেকে প্রায় শতাধিক কৃষক এসেচপাম্পর আওতায় ধান, আলু, ভুট্টা, গম চাষাবাদ করতেন। তার এক পর্যায় জহির উদ্দিন তার পারিবারিক সমস্যা কারণে সেচপাম্পটি চালাতে অপারগতা প্রকাশ করায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহযোগীতায় ২০১০ইং সালে একই গ্রামের ওই সেচপাম্পের উপকার ভোগী কৃষক শহিদুল ইসলামের কাছে এফিডেভিট মুলে হস্তান্তর করেন। তখন থেকে তিনি সেচপাম্পটি দেখভালসহ নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেন। কোন মাসেরেই বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েনি সেচপাম্পটির।
২০১৮ সালে হঠাৎ একদিন সেচপাম্পটির মিটার পুড়ে যায়। তখন তারা মিটার পুড়ে যাওয়ার বিষয়টি হাড়ীভাঙ্গা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে অবগত করেন। তখন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সাময়িক ভাবে সেচপাম্পটি বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে মিটার খুলে অফিসে নিয়ে আসেন আর সেচপাম্প মালিকে নতুন মিটারসহ সেচপাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করতে বলেন। সেই মোতাবেক দফায় দফায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে সংযোগের জন্য আবেদন করা পরেও সংযোগ পায়নি। বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে ঘুষের টাকা না পাওয়ার বিভিন্ন ভুলভাল রিপোর্ট করেন অফিসের বড়কর্তা বাবু ইমরান হোসেন। সেচপাম্প সংযোগ চালু করতে বিলম্ব হওয়ার কৃষক শহিদুল ইসলাম অফিসের বড়কর্তা বাবু ইমরান হোসেনকে সেচপাম্পের সংযোগ চালু করতে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েও দিনের পর দিন টালবাহনার শিকার হচ্ছেন।এখন দুর্নীতিবাজ ওই অফিসের বড়কর্তা বাবু’র মুখে অন্য বুলি। ঘুষের বিনিময়ে বিধি বহিভর্ভাবে মাস্টার প্লান এর বাইরে গিয়ে সকল নিয়মনীতি উপেক্ষা করে পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে ওই সেচপাম্প আওতাধীন শতাধিক কৃষক চাষাবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছে।
অপরদিকে বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব সরকার। সরকার কৃষিখাতে কোটি কোটি টাকা প্রণোদনা দিলেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি’র কর্তাবাবুদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সরকারের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।
এবিষয়ে কৃষক শহিদুল ইসলামের পুত্র জাপা নেতা আসাদুল ইসলাম আসাদ বলেন, ২০১৮ সাল থেকে আমার বাবার সাথে টালবাহনা করছেন ইমরান। তিনি সংযোগের নামে ২০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে আবারও টাকার ধান্ধা করছেন। অথচ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজনও পুনরায় দ্রুত সেচ সংযোগ চালুর বিষয় সুপারিশ করেও সুফল পায়নি। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের বড়কর্তা বাবু ইমরান হোসেনের নানা রকম ছলচাতুরিতে কালৎক্ষেপন করায় সাধারণ গ্রাহকরা চরম হয়রানীর শিকার হচ্ছে।
এবিষয়ে লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অফিসের বড়কর্তা বাবু ইমরান হোসেন সাথে তার মুঠোফোনে কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিচিফ করেনি।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। বিস্তারিত কিছু জানি না। তারপরও বিষয়টির খোঁজখবর নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। (প্রিয় পাঠক, আগামী সংখ্যায় চোখ রাখুন, ইমরান পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে যোগদানের পর থেকে এ পর্যন্ত কি পরিমান অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছে মুলত: তারেই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আসছে)।