স্টাফ রিপোর্টার ।। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় শহীদ মিনারের সামনে ইংরেজি বর্ণ ব্যবহার করে নামফলক তৈরি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভাষা প্রেমিরা। তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবী সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যই শহীদ মিনারের পাশে ইংরেজি অক্ষরে নাম ফলক নির্মাণ করা হয়েছে।
উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে রাষ্ট্রীয় অর্থে দৃষ্টি নন্দন একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। আর ওই শহীদ মিনারের সামনেই ইংরেজি মোটা অক্ষরে তৈরি করা হয় নামফলক। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের এমন পরিকল্পনাহীন কাজে জেলা জুড়ে বির্তকের জন্ম দিয়েছে। এমন দায়িত্বহীনতায় ক্ষুব্ধ ভাষা সৈনিক, ভাষা প্রেমীসহ গোটা জেলাবাসী। তারা ভাষার মাসেই শহীদদের সম্মানার্থে দ্রুত ইংরেজি বর্ণ অপসারণ করে ফলকটিতে বাংলা বর্ণ ব্যবহারের দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনছুর উদ্দিন বলেন, যৌথ পরিকল্পনায় ও সকলের সাথে আলোচনা করেই তৈরি করা হয়েছে ওই নামফলক। উপজেলা পরিষদের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যই শহীদ মিনারের পাশে ইংরেজি অক্ষরে উপজেলার নাম ফলকটি নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বিষয়টি দোষের কিছু নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে লালমনিরহাটের ভাষা সৈনিক আব্দুল কাদের ভাসানী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যে বাংলা ভাসার জন্য লড়াই করেছি, আন্দোলন করেছি, যে ভাষার জন্য কতোজন বুকের তাজা রক্ত মাটিতে ঠেলে দিয়েছেন, আজ সেই ভাষাকে অমর্যাদা করা হচ্ছে। বাংলা ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের স্মরণেই নির্মিত হয়েছে শহীদ মিনার। আর সেই শহীদ মিনারের সামনে ইংরেজি বর্ণমালা থাকা বাংলা ভাষাকে অপমান এবং অমর্যাদা করা। তিনি দ্রুত ইংরেজি বর্ণমালা অপসারণ এবং বাংলা ভাষার অমর্যাদাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
ভাষা সৈনিক জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, উপজেলা প্রশাসনের এই নির্বুদ্ধিতা মেনে নেয়ার মতো নয়। কতো শহীদের রক্ষের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই বাংলা ভাষা। রক্তে ঝড়া মায়ের ভাষাকে উপজেলা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা কখনই অপমান করতে পারে না। তিনি দ্রুত ইংরেজি বর্ণমালায় লেখা নাম ফলকটি অপসারণ করে সেখানে বাংলা বর্ণমালা ব্যবহার করে নাম ফলক নির্মাণের দাবী জানান।
জেলার একমাত্র বীর প্রতীক ক্ষেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অবঃ) আজিজুল হক ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরে জানান, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো না এবং বাংলা রাষ্ট্র ভাষাও হতো না।
তিনি বলেন, ভাষার মর্যাদা রক্ষায় জিবন দান ও বাংলা ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নজির বিশ্বে আর নাই। তিনি এই ভাষার মাসেই দ্রুত ইংরেজি বর্ণমালা অপসারণের দাবী জানান।