স্টাফ রিপোর্টার ॥ গোখাদ্য হিসেবে লালমনিরহাটের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় ভুট্টার পাতা বিক্রির হাট বসছে। ২৫ বছর ধরে ভুট্টা চাষে বদলে গেছে লালমনিরহাটের মানুষের জীবন যাত্রারমান ও অর্থনীতি। এবছর ভুট্টা চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ভুট্টা রোপণের পর কয়েকবার বৃষ্টির ফলে কৃষকদের খরচও কমে গেছে। এরই মধ্যে তিস্তা ও ধরলা নদীর চর এলাকাগুলোতে ভুট্টা তোলার ধুম পড়েছে। তাই কৃষকরা এখন তাদের ভুট্টা ক্ষেতের গাছের পাতা ছিঁড়ে ফেলছেন। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চর অঞ্চলের নিন্ম আয়ের লোকজন ভুট্টার পাতা বিক্রি করে ভালোভাবে জীবন-জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন।
জানা যায়, জেলার কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে হাট-বাজারে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ভুট্টা পাতার হাট বসছে। সেখানে কিছু সংখ্যক লোকজনকে ভুট্টার পাতা বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ হাটে প্রতি ভুট্টার পাতার আটি বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা দরে। দামে কম তাই গরুর খাদ্য হিসেবে ৩০ থেকে ৫০টি আটি কিনছেন তাদের কাছ থেকে।
ভুট্রা চাষী নজরুল ইসলাম জানান, প্রতিবিঘা ভুট্টা ক্ষেতের পাতা ও গাছের মাথা কাটতে ২ জন করে শ্রমিক লাগে। এখন আর তা লাগছে না। নিন্ম আয়ের লোকজন বিনা মূল্যে পাতা ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে। এতে কোনো ভুট্টার ক্ষতি হচ্ছে না। ভুট্টা তোলার ১৫-২০ দিন আগে গাছের পাতা ও মাথা কেটে দিতে হয়। এতে ভুট্টায় সূর্যের আলো পড়লে ভুট্টার রং ভালো হয়। দিনমজুর শ্রেণির লোকজন পরিবারের সবাই মিলে ভুট্টার পাতা ছিঁড়ে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছেন। দামে কম হওয়ায় অনেকেই গোখাদ্য হিসেবে তা কিনছেন। এতে একদিকে নিন্ম আয়ের লোকজন যেমন আয় করছেন, অন্যদিকে কম দামে বিভিন্ন গরুর খামারিরা পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন। ফলে তিস্তারচর থেকে কেউ মাথায়, কেউবা ঘাড়ে, কেউ সাইকেলে করে ভুট্টার পাতা নিয়ে বাজারে ঢুকছেন।
ভুট্টা চাষী আলাউদ্দিন (৫০) বলেন, বর্তমানে কোনো কাজ কাম হাতে নেই তাই তিস্তার চরে গিয়ে ভুট্টার পাতা সংগ্রহ করে এই ভোটমারি রেলস্টেশনে বিক্রি করতে আসছি। এতে একশ থেকে দেড়শ টাকা আয় হচ্ছে তা দিয়ে বাজার করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।
জেলার প্রাণিসম্পদ অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পশুখাদ্য হিসেবে ভুট্টার পাতা উত্তম খাবার। ভুট্টার পাতা গবাদি পশুকে খাওয়ালে কোনো ক্ষতি হয় না। খামারিরা ভুট্টার পাতা সংগ্রহ করে গরু খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করলে বেশি লাভবান হবেন।
কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, তিস্তা ও ধরলা নদীর চরে এবছর ভুট্টার বাম্পার ফলন হওয়ার আশা করা হচ্ছে। কৃষকরা ভুট্টা চাষে লাভবান হচ্ছেন। পাশাপাশি গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে কৃষকরা ভুট্টার পাতা বিক্রি করেও স্বাবলম্বী হচ্ছেন।