বাংলার সংবাদ ডেস্ক ।। চট্টগ্রামে মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় বাদী ছিলেন তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার। তদন্তে তার বিরুদ্ধেই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলাটি তদন্তের ধারাবাহিকতায় প্রায় ৫ বছরের মাথায় বাদী বাবুল আক্তারই হচ্ছেন ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত। ইতোমধ্যে বুধবার (১১ মে) বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় নতুন একটি মামলা দায়ের করেছেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।
পিবিআই জানিয়েছে, মিতু হত্যা মামলাটি তদন্তে তার স্বামী বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। কিন্তু মামলার বাদীকে ইচ্ছে করলেই আইন অনুযায়ী গ্রেফতার করা যায় না। এজন্য আগের মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন আজ সকালে আদালতে দাখিল করেন পিবিআইয়ের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। পরে নতুন মামলায় বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার (১২ মে) দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পিবিআই প্রধান উপ-মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে আমরা চাইলেও কাগজে-কলমে অনেক কিছু বলতে পারি না। মিতু হত্যার ঘটনায় উদ্ধার হওয়া ভিডিও ফুটেজ আমরা একজনকে দেখেছিলাম, তার নাম কামরুল ইসলাম মুসা। কিন্তু মুসা এখনও নিখোঁজ। আমরা জেনেছি মুসা নিয়মিত বাবুল আক্তারের বাসায় যাতায়াত করতেন। বাবুলের অনুপস্থিতিতে মুসা বাসার বাজারও করে দিতেন। পিবিআই জানার চেষ্টা করেছে, মুসা সোর্স ছিল কি-না। এটাই পিবিআই প্রমাণের চেষ্টা করেছে। মুসাকে শুধু বাবুল আক্তারই চিনতেন। ভিডিও ফুটেজ স্পষ্ট এই মুসাকে চেনা গেছে’ বলেন তিনি।
পিবিআই প্রধান বলেন, কিন্তু তদন্তে ও জিজ্ঞাসাবাদে মুসার দিকে বাবুল আক্তারের সন্দেহ হচ্ছিল না। পরে আমরা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি যে বাবুল আক্তার ইচ্ছাকৃতভাবে তার ব্যক্তিগত সোর্স মুসাকে সন্দেহ করেনি বা সন্দেহজনক বলে পুলিশকে জানায়নি।
তিনি আরও বলেন, মিতু হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন আগে জঙ্গি কার্যক্রমে আহত হন বলে দাবি করেন বাবুল। আমরা সেটিই বিশ্বাস করেছি। আবার স্ত্রী মিতু নিহতের পর যে তার আচরণ ছিল, তা ছিল সবচেয়ে আপনজন হারানোর মতো। তাই তার কথা সবাই বিশ্বাস করেছিলেন।
তদন্তের স্বার্থে পিবিআই বাবুল আক্তারকে ডাকা হয়েছিল। সাক্ষাতের পর বাবুল আক্তার পিবিআইকে কিছু প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। বিষয়গুলো আইজিপিকে জানানো হয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও জানানো হয়। এ অবস্থায় ব্যাক করার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে পিবিআই।
পিবিআই প্রধান আরও বলেন, মামলার তদন্তে আমরা নড়াইলের এক ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণে নিয়েছিলাম। তার নাম গাজী আল মামুন। তিনি বাবুল আক্তারের বন্ধু। তার অপর বন্ধু সাইফুল হককেও পিবিআই ডাকে। তারা সাক্ষী হিসেবে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এর ভিত্তিতে পুরনো মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।
মামলার তদন্ত সম্পর্কে বনজ কুমার আরও বলেন, ঘটনায় প্রথমে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা আসেনি। মহামান্য হাইকোর্ট জানতে চেয়েছেন কতোদিন ঝুলে থাকবে এই মামলা? তদন্তে কিছু নতুন প্রশ্ন আসে, সেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মামলা ভিন্নদিকে মোড় নেয়।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানম ওরফে মিতুকে।
ওই ঘটনায় বাদী হয়ে বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। তাতে তিনি বলেন, তাঁর জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রী আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে থাকতে পারেন। তবে সপ্তাহ দুয়েকের মাথায় মাহমুদা হত্যার তদন্ত নতুন মোড় নেয়। অব্যাহতভাবে মাহমুদার মা–বাবা এই হত্যার জন্য বাবুল আক্তারকে দায়ী করে আসছেন।