কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি ।। ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বাকি না দেওয়ায় ব্যবসায়ী মো. সেলিমকে পিটিয়ে মাথার খুলি ভাঙার ঘটনা ঘটেছে। অবশেষে দুই মাস ১০ দিনের মাথায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। তবে তাকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন চিকিৎসকরা।
শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত সেলিম দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের নতুন বাক্তারচর এলাকার বাসিন্দা। তবে তিনি পাশের মোল্লারহাট বাজারে জ্বালানি তেলের ব্যবসায় জড়িত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ব্যবসায়ী সেলিম জ্বালানির ব্যবসা করেন। তার কাছ রানা রায়হান নামে এক ক্রেতা বাকিতে ১১ হাজার টাকার ডিজেল কিনেন। কিন্তু সেই টাকা তিনি পরিশোধ করেননি। কিন্তু গত ৩ জুন রানা আরো ৬৩ হাজার টাকার তেল বাকিতে নিতে সেলিমের দোকানে আসেন। সেলিম দোকানে ছিলেন না। তখন দোকানে থাকা সেলিমের ছোটভাই শরীফ ও বোনজামাই নূর মোহাম্মদ বাকিতে ডিজেল দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গত ৩ জুন দুপুরে রানা রায়হানের নেতৃত্বে আব্বাস আলী, হাতিম মিয়া, রবিউল্ল্যাহ, জাহের আলী, শাহীন, সজিবসহ ১০-১২ জন লাঠিসোটা নিয়ে শরীফ ও নূর মোহাম্মদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় বাড়িতে ছিলেন সেলিম। খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গেলে সন্ত্রাসীরা তাকে পিটিয়ে মাথার খুলি ভেঙে দেয়।
সূত্র আরো জানায়, গুরুতর অবস্থায় সেলিমকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কয়েক দফা মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের সময় খুলির কিছু অংশ মাথা থেকে খুলে আলাদা করে রাখেন চিকিৎসকরা। সেই খুলি এনে সেলিমের বাড়ির ফ্রিজে রাখা হয়।
সেলিমের স্ত্রী আকলিমা বেগম বলেন, মাথার অস্ত্রোপচারের পর খুলির কিছু অংশ ফ্রিজে রাখতে চিকিৎসকরা। তারা জানান, অস্ত্রোপচার সফল হলে ফ্রিজে রাখা খুলির অংশ মাথায় প্রতিস্থাপন করা হবে। কিন্তু সেটি আর হলো না। শুক্রবার রাত ৩টার দিকে তিনি মারা গেছেন।
এ সময় বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন আকলিমা। তিনি বলেন, বিনা অপরাধে ওরা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। তিন সন্তান (দুই মেয়ে ও এক ছেলে) নিয়ে এখন আমি কীভাবে চলব?
পুলিশের তথ্যানুযায়ী, ৩ জুন ঘটনার পর স্বামীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন আকলিমা। স্ত্রীর করা মামলায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে আসামিরা আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে যান। হত্যাচেষ্টা মামলাটির প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন তৎকালীন জাজিরা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. কায়সার।
এদিকে, নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, প্রথম কর্মকর্তা তদন্তে গুরুত্ব দেননি। পরে তারা এ ব্যাপারে মৌখিকভাবে থানার ওসিকে জানালে তিনি তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করেন। এখন মামলাটির তদন্ত করছেন এসআই নাজমুল আলম।
এসআই নাজমুল আলম বলেন, হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছিল। আহত ব্যক্তির মৃত্যুর ফলে মামলাটি এখন হত্যা মামলায় রূপ নেবে। আগের ধারাগুলোর সঙ্গে ৩০২ ধারা যোগ হবে। এখন হত্যা মামলা হিসেবেই এটি তদন্ত হবে।