মোঃ রাশেদুল ইসলাম, পঞ্চগড় ।। ভরা বৃষ্টিতে পুকুর সংস্কারের নামে চলছে পুকুর চুরি! পঞ্চগড়ে চলতি ভরা বর্ষায় চলছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পুকুর সংস্কারের কাজ । কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই । এই পুকুর সংস্কার কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণ বেশি বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সহ স্থানীয়দের ।
জানা গেছে, দুইটি টেন্ডারে একটিতে ৭টি এবং আরেকটিতে ৫টি সহ মোট ১২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে চলছে এই পুকুর সংস্কারের কাজ ।
কয়েক জন স্কুলের শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সম্পূর্ণ এলজিইডির তত্ত্বাবধানে এই পুকুর সংস্কারের কাজ চলছে । একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, পুকুরে সাড়া বছর কমবেশি পানি থাকে । পুকুরের নিচে সামান্য কাদা পড়েছে ।এবার বর্ষা শেষ হলে কিছু টাকা ব্যয়ে আমারা থাকা কাঁদা পরিষ্কার করতাম ।
কিন্তু সরকারি ভাবে যে এতো গভীর পুকুর করা হয়েছে তা আমাদের প্রয়োজন ছিল না।এবং পুকুরের গভীরতার জন্য যে কোন সময় ঘটতে পারে অনাকাঙিক্ষত দুর্ঘটনা ।
আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষক বলেন, পুকুর সংস্কার শেষ হতে না হতেই চারপাশের পাড় ভেঙ্গে যাচ্ছে ।এতে পুকুরের তলায় আরো বেশি কাদা পড়ছে । এটা প্রয়োজন ছিল না ।এই পুকুরে মাছ চাষ করাও কঠিন ।
স্থানীয় সাধারণ মানুষ বলেন, বাড়িতে ছোট শিশুরা আছে ।পুকুরের চারপাশে নিরাপত্তার কোন ব্যাবস্থা নেই ।অপরদিকে এতো গভীর পুকুর আমাদের জন্য বিপদের কারন হয়ে দাড়িয়েছে।
চাকলাহাট কে পি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুর সংস্কার নিয়ে স্থানীয়রা জানান, এখানে উচ্চ বিদ্যালয়ের সাথেই একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এবং পুকুরের দক্ষিণ পূর্ব দিকে একটি কিন্ডারগার্টেন আছে।পুকুরের পশ্চিম দিকে পুরো একটি ঘনবসতিপূর্ণ গ্রাম এসবের মাঝখানের এতো গভীর পুকুর আমাদের জন্য খুবই বিপদের ।তারা এই ভরা বর্ষায় পুকুরের পানি অপ্রস্বারন করে পুকুরে নামার সিঁড়ি তৈরি করছে। যার ভিত্তিটাই দুর্বল ।
ভরা বর্ষায় কংক্রিটের ঢালাই এবং পুকুর সংস্কার মানে সরকারি টাকা আত্মসাত ছাড়া অন্য কিছুই নয়।পুকুরের গভীরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদী সামাজিক সংগঠনগুলো । তাদের দাবি এতো গভীর পুকুরের এমন কি প্রয়োজন ।যদি এতো গভীর পুকুর খনন করা যায় তবে এর সম গভীরতায় তেঁতুলিয়া উপজেলায় পাথর উত্তোলন বন্ধ কেন।
এই গভীর পুকুরের জন্য পানির স্তর নিচে নামবে।যা আমাদের জন্য বিপদের কারন হবে । এটা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ভাবে পরিবেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ।এ ছাড়াও বর্ষা মৌশুমে পুকুর সংস্কারের নামে বিপদ ডেকে আনা হচ্ছে । গভীর পুকুরের জন্য রাস্তা সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলো এখন হুমকির মুখে। পুকুরের গভীরতা ১০ ফিট হলে রাস্তা থেকে পুকুরের দুরত্ব ২০ ফিট হওয়ার কথা থাকলেও সেটা কথাও মানা হয় নি।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আতাউর রহমান বলেন, পুকুর সংস্কারের কাজ এখনো শেষ হয়নি, যেসব পুকুরের পাড় ভেঙ্গে গেছে সেগুলো পুনরায় সংস্কার করা হবে । ম্যানুয়াল অনুযায়ী সিঁড়ি তৈরি করা হচ্ছে ।তাই বর্ষা মৌশুমে হলেও সমস্যা নেই ।