পঞ্চগড়ে প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রচুর পরিমাণে অবৈধ ভাবে ভারতীয় গরু বাংলাদেশে আসছে ।জেলার গরু ক্রয় বিক্রয় বাজার গুলোতে ভারতীয় গরুর চাপে কোনঠাসা হয়ে গেছে দেশীয় গরু । সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে অবৈধ ভাবে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় গরু বাংলাদেশে আনা হচ্ছে এ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে উপর মহল পর্যন্ত সবকিছুই ম্যানেজ করে ভারত থেকে অবৈধ পথে এসব গরু দেশে আনা হচ্ছে ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, পঞ্চগড় জেলার মধ্যে অবৈধ পথে যেসব রুট ব্যবহার করে চোরাকারবারীরা ভারত থেকে গরু দেশে নিয়ে আসে তার মধ্যে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার ১৮ বিজিবি এর আওতাধীন রওশনপুর বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার ডাহুক নদী ও ভুতিপুকুর বিওপি এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকার করতোয়া নদী এবং ৫৬ বিজিবি এর আওতাধীন শুকানি বিওপি এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকার করতোয়া নদী, অমরখানা বিওপি এর দ্বায়িত্বপূর্ন এলাকার চাওয়াই নদী, ভিতরগড় বিওপি এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকার তালমা নদী ও ঘাগরা বিওপি এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকার স্থল রুট মমিনপাড়া, ঢাংঙ্গি, বেরুবাড়ি, ঝুলিপাড়া দিয়ে গরু চোরাচালান করা হয় ।তবে সবচেয়ে বেশি করতোয়া নদীর ভারত বাংলাদেশ প্রবেশ মুখ দিয়ে গরু আনা হয়।
অথচ নদীর প্রবেশ মুখের পশ্চিম দিকে ১৮ বিজিবি এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকার ভুতিপুকুর বিওপি ও নদীর পূর্ব দিকে ৫৬ বিজিবি এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকার শুকানি বিওপি হলেও নদী দিয়ে চোরাচালান বন্ধে ব্যর্থ উভয় বিওপি। তবে বিষয়টি নিয়ে উভয় বিওপির দ্বায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ১৮ ও ৫৬ বিজিবি এর উদ্ধতর্ন কর্মকর্তারাও সীমান্তে চোরাচালান বন্ধে নিজের কঠোর অবস্থানের কথা জানান ।
সংশ্লিষ্ট এলাকার সীমান্তে বসবাসরত স্থানীয় সাধারণ মানুষ জানায়, সন্ধ্যার পর থেকে চোরাকারবারীরা এলাকায় আসতে শুরু করে ।রাত গভীর হলেই শুরু হয় গরু চোরাচালান । সকালে সূর্যোদয়ের পর থেকে এসব গরু নছিমন,ভোটভোটি ও পিকআপ ভ্যানে করে জেলা শহর সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হয় । গরু ভারত থেকে দেশে আসা মাত্রই স্থানীয় প্রশাসন বৈধ কাগজপত্র তৈরি করে দেন । মাঝেমধ্যে গরু দেশে আনার পূর্বেই গরুর বৈধ কাগজপত্র তৈরি করে দেন স্থানীয় প্রশাসন । পরবর্তীতে উপর মহলের কথিত লাইনম্যান হিসেবে পরিচিতরা গরু হিসেবে চাঁদা তোলেন উপর মহলের জন্য ।
মোঃ রবিউল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি জানান, যদি সবকিছু ম্যানেজ করে গরু না আনা হয় তাহলে, ভুতিপুকুর ও শুকানি দুই পাশে দুইটি বিজিবি ক্যাম্প, স্থানীয় প্রশাসন, তেঁতুলিয়া মডেল থানা পুলিশ, পরবর্তীতে মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ, তারপর সদর থানা পুলিশ ,আবার তেঁতুলিয়ার শালবাহান ও পঞ্চগড় রাজনগর গরু ক্রয় বিক্রয় হাট ইজারাদার কতৃপক্ষের দেওয়া নামে বেনামে গরু ক্রয় বিক্রয়ের রশিদ, এতোকিছু কীভাবে সম্ভব ।
ভুতিপুকুর সীমান্তে বসবাসরত স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, কিছুদিন আগে ভুতিপুকুর বিওপি থেকে আনুমানিক ৬০০ ফিট দূরে একজনের বাড়ি থেকে তেঁতুলিয়া মডেল থানা পুলিশ ভারত থেকে অবৈধ পথে আসা ২৭ টি গরু উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় । আবার শুকানি বিওপিতে প্রায় সময় দুএকটা গরু আটক হলেও ভুতিপুকুর বিওপি নির্বাক হয়ে থাকে । গত শীতে একদিনে ৭০০ গরু অবৈধ ভাবে বাংলাদেশে আনা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন অনেকেই।
এছাড়া আবহাওয়া খারাপ হলেই বেপরোয়া হয়ে যায় গরু চোরাকারবারীরা। বর্তমানে ঐ এলাকা দিয়ে দৈনিক গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ টি গরু দেশে আনা হচ্ছে ।বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ইতিপূর্বে অনেক খবর প্রকাশিত হলেও বিষয়টি কারো নজরে আসে নি বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয় নি ।
গরুর সাথে অস্ত্র ও মাদক আসছে বলে জানিয়েছেন অনেকেই । যদি সবার চোখে ধুলো দিয়ে এতো বড় একটা গরু অবৈধভাবে দেশে আনা যায় তাহলে অস্ত্র ও মাদক পাচার করা তো খুবই সহজ । পুরো বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন সবাই।