লিটন পাঠান, হবিগঞ্জ থেকে ।। রঘুনন্দন পাহাড় সহ হবিগঞ্জের মাধবপুরের উঁচু এলাকায় বেড়েই চলেছে ২কলার কদর। পাহাড়ি এলাকায় পতিত জমিতে কলা চাষে সফলতা আসছে। তাই দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে কলার চাষ। পাহাড়ে কলা চাষে একদিকে যেমন গাছে কোনো ধরনের সার প্রয়োগের দরকার হয় না অন্যদিকে এখানে উৎপাদিত কলা পাকাতে কোনো কেমিক্যালও মেশানো হয় না। গাছে পাকা শুরু হলেই কলা বিক্রি করা হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব গাছ পাকা কলা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। বাড়ছে কদরও।
শুধু পাহাড়ি এলাকাই নয় কলা চাষে বেশি অর্থ খরচ না হওয়ায় উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এখন শুরু হয়েছে বিষমুক্ত এ কলা চাষ। পুকুর কিংবা জলাশয় চার পাশ জুড়ে মাছ চাষের পাশাশি সাড়ি সাড়ি করে লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে কলা গাছ। আর এতেই কলা বিক্রি করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। জানা যায়, হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার আদিবাসীসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ পাহাড়ি পতিত জমিতে দেশীয় কলার চাষ করছেন। এসব কলা গাছে পাকা শুরু হলে তারা বিক্রি করেন। গাছ পাকা হওয়ায় এখানকার কলার চাহিদাও প্রচুর। খেতেও সুস্বাদু। ফলে এখন পাহাড়ে প্রতিযোগিতামূলক ভাবে কলা চাষ শুরু হয়েছে।
এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেড়েছে মাছের চাষ। একরের পর একর জমি খনন করে তৈরি করা হচ্ছে পুকুর। আর এসব পুকুরে চাষ করা হচ্ছে মাছ। পুকুর পাড়ে লাগানো হচ্ছে কলা গাছ। সরেজমিন উঁচু পাহাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখতে পাই, পাহাড়ের টিলায় কলা চাষ হচ্ছে। আবার পাহাড়ের লেবু বাগানেও বাগানের মধ্যে মধ্যে দেশি কলার চাষ করা শুরু হয়েছে। এতে করে তারা লেবুর সঙ্গে কলা বিক্রি করেও আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। এছাড়াও পাহাড়িরা তাদের বসত ভিটার চার পাশে কলা গাছ লাগিয়ে রেখেছেন।
মাধবপুর উপজেলার বাকসাইর গ্রামের আরাধন দাশ বলেন, তিনি মাছ চাষের জন্য বাড়ির পার্শ্ববর্তী জমিতে পুকুর খনন করেছেন। প্রায় তিন একর জায়গা জুড়ে পুকুরটির চারপাশে লাগিয়েছেন ৯শতটি কলার গাছ। প্রতি গাছ বছরে একটি করে কলার ছড়ি দিলেও তিনি পান ৮শ ছড়ি। প্রতিটি ছড়ির পাইকারী মূল্য গড়ে ৭০০ টাকা। এতে বছরে তিনি প্রায় সাড়ে ২ লক্ষাধিক টাকা আয় করতে পারেন। তবে একেকটি গাছে অনেক সময় একাধিক কলার ছড়িও পাওয়া যায় বলে তিনি জানান।
তিনি আরো বলেন, নামে মাত্র মূল্যে কলার চারাগুলো রোপণ করে একটু খাটুনি দিয়ে করতে পরছেন বিষমুক্ত কলার চাষ। চারা রোপণের শুরুর দিকে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে তিনি আগাছানাশক একটি ওষুধ ব্যবহার করেন।
কলাচাষি নিজাম খান বলেন, পাহাড়ি এলাকায় মাঠিতে উর্বরতা থাকায় কলাগাছে একদিকে যেমন সার প্রয়োগের দরকার হচ্ছে না অন্যদিকে পাকাতে ব্যবহার হচ্ছে কোনো কেমিক্যাল। ফলে পুরোপুরি বিষমুক্ত হওয়ায় কলার মূল্যও বাজারে বেশ ভালো। আর বারো মাসই কলার ফলন পাওয়া যাচ্ছে।
লেবুচাষি শৈলেন দাস বলেন, পাহাড়ি এলাকায় ১০টিরও অধিক টিলায় তিনি লেবু চাষ করেছেন। আর লেবু গাছের ফাঁকে ফাঁকে কলাগাছ লাগিয়ে দারুন ফলন পাচ্ছেন। লেবুর মতো বারো মাস কলাও বিক্রি করতে পারছেন। তার মতো আশপাশের আরও অনেকেই লেবু বাগানে কলা চাষ শুরু করেছেন। তারাও ভালো ফলন পাচ্ছেন।
বাকসাইর গ্রামের জগৎ দাশ বলেন, বাজারে কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো কলা বিক্রি হচ্ছে। তাই বাজারের কলার ছেয়ে ক্রেতাদের কাছে গাছ পাকা পাহাড়ি কলার কদর বেশি। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে ফরমালিনযুক্ত ফলে সরবরাহ বাড়ায় ক্রেতারা গাছ পাকা অথবা আধা পাকা কলা ক্রয় করে নিয়ে নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে মাধবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আল মামুন হাছান বলেন, কলা চাষে তেমন বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় না। এসব চাষিদেরকে সময়মত সব ধরণের সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও বিষমুক্ত ভাবে যাতে করে কলা চাষ করা যায় সে জন্য চাষিদেরকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।