স্টাফ রিপোর্টার ।। লালমনিরহাটের ধরলা নদীর দূর্ঘম চরাঞ্চলের অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান এবার মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েও অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারছে না। দারিদ্রতা কে জয় করে মিজানুর রহমান ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় শেরে-বাংলা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান।
জানা গেছে, লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের চর কুলাঘাট গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে মিজানুর রহমান। ধরলা নদী তীরবর্তীর একমাত্র শিক্ষার্থী মিজানুর এবার মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
অথচ অর্থাভাবে সে সুযোগ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের চর কুলাঘাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও লালমনিরহাট সরকারী কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন তিনি।
পরিবার ও এলাকাবাসীর এ নিয়ে আনন্দ থাকলেও তাদের মাঝে বিরাজ করছে অনিশ্চয়তার ছায়া। মিজান শেষ পর্যন্ত লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে কিনা এমন চিন্তায় মুষড়ে পড়েছেন পুরো পরিবার। ২০১২ সালে মারা যায় মিজানের দিনমজুর বাবা মফিজ উদ্দিন। তখন সে ষষ্ঠ শ্রেনীর শিক্ষার্থী। ছয় সন্তানকে নিয়ে চরম অর্থাভাবে পড়ে মা জোবেদা বেগম। জায়গা জমি বলতে কিছুই নেই। মাত্র ৮ শত জমির উপর বসতঘর।
নবম শ্রেনী থেকে প্রাইভেট টিউশনি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যায় মিজান। ধার-দেনা, মায়ের মুষ্টির চাল আর অন্যের সাহায্য সহযোগিতায় এতদূর এগুতে পারলেও এখন অনিশ্চয়তায় পড়েছেন সে। মেডিকেলে ভর্তি ফি,কংকাল ক্রয় ও আনুষাঙ্গিক খরচসহ পাঁচ বছরের পড়াশুনায় প্রচুর অর্থের প্রয়োজন।
মা জোবেদা বেগম বলেন, বাহে, হামার কিচ্ছু নাই। না খেয়ে ছেলেকে পড়ালেখা করাইছি। এলাকাসাবীর সহযোগিতায় সবার ছোট ছেলেকে পড়াশুনা করে এত দুর নিয়ে আসছি। ডাক্তারী পড়া এত টাকা হামা কই পামো? এখন ডাক্তারী ভর্তি, প্রতি মাসের টাকা এখন কিভাবে যোগাড় হবে তা নিয়ে তিনি চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটছে। তিনি সমাজের বিত্তশীল লোকদের সহযোগিতা চান।
চর কুলাঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কুলাঘাট ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী জানান, নিজের চেষ্টায় ও সবার সহযোগিতায় মিজান এত দুর এগিয়েছে। মেডিকেলে পড়তে যে খরচাদি হবে তার যোগান দেওয়া কষ্টকর হবে ওই পরিবারের। অত্র ইউনিয়নের মধ্যে মিজানই প্রথম মেডিকেল শিক্ষার্থী বলে তিনি জানান।
মেধাবী এই শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান বলেন, নবম শ্রেণি থেকে টিউশনি আর ধার দেনা করে পড়াশুনা চালিয়ে আসছি। এখন কোন সংস্থা যদি আমার পড়াশুনার জন্য এগিয়ে আসে তাহলে চিকিৎসক হয়ে বন্যাপীড়িত এই ইউনিয়নের দরিদ্র মানুষদের পাশে থাকতে চাই। পাশাপাশি মায়ের স্বপ্ন পূরনে তিনি বিত্তবানদের সহযোগিতা চান।