কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ।। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের খেরুয়ারচর এলাকায় কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত গুচ্ছ গ্রামের ঘর সুবিধাভোগীদের নিকট হস্থান্তর করার বছর না ফিরতেই বৃষ্টির পানিতে ধসে যাচ্ছে।
প্রকল্পের কাজে মাটি ভরাটের স্থলে ড্রেজার মেশিনে বালু কাটা এবং নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা(গাইড ওয়াল) না থাকায় বৃষ্টির তোরে ঘরের মাটি ধসে যাচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
জানা গেছে,উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নে খেরুয়ারচর এলাকায় ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ভূমি মন্ত্রনালয়ের অধিনে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের তত্ত্বাবধানে খেরুয়ারচর গুচ্ছ গ্রামে মাটি ভরাটের কাজ করা হয়। ওই গুচ্ছ গ্রামে মাটি ভরাট বাবদ ২০৮মে.টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল, যার আর্থিক মূল্য ছিল ৬০লাখ টাকার উপরে।
সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে সভাপতি করে নির্দিষ্ট কমিটির মাধ্যমে এই মাটি ভরাটের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছিল। পরে গুচ্ছ গ্রাম প্রকল্পে টিন, লোহার এ্যাঙ্গেল ও রড সিমেন্টের সিড়ি টিয়ে প্রতি পরিবারের জন্য বারান্দাসহ ১টি ঘর ও টয়লেট এরুপ ৪০টি ঘর নির্মান করা হয়। প্রতি ৫ পরিবারের জন্য একটি গোসলখানা ও একটি টিউবওয়েল দেয়া হয়। এতে প্রতিটি ঘরের ব্যায় ধরা হয়েছিল ১লাখ ৫০ হাজার টাকা। গুচ্ছ গ্রামে ৪০পরিবারের আবাসন নির্মানের জন্য মোট বরাদ্দ দেয়া হয় ৬০লাখ টাকা।
সরাসরি উপজেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে নির্মিত ওই ঘরগুলো সংশ্লিষ্ট এলাকার বিভিন্ন ব্যাক্তির নামে বরাদ্দ করা হলেও এখন পর্যন্ত অধিকাংশ ঘরই রয়েছে তালাবন্ধ। এরই মধ্যে সামান্য বৃষ্টির পানিতে ঘরের নিচ থেকে মাটি ধসে গিয়ে ঘর হেলে পড়ে যাচ্ছে। প্রকল্পের মাটি কাটা থেকে শুরু করে ঘর নির্মান পর্যন্ত বিভিন্ন অনিয়মের ফলে এমন ঘটনা ঘটছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
সরেজমিনে গুচ্ছ গ্রামটিতে গিয়ে দেখা যায়, গুচ্ছ গ্রামে ভরাটকৃত মাটি বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টির পানিতে ধসে নেমে গেছে। এতে বেশ কয়েকটি ঘরের ভিতর থেকে মাটি ধসে নেমে যাওয়ায় ঘর ও টয়লেট হেলে পড়ে গেছে।
সেখানে মৃত আহাদ আলীর প্রতিবন্ধি স্ত্রী সরবানু(৩৪), রফিকের স্ত্রী চম্পা(৩০) ও জাহেদুলের স্ত্রী চায়নাসহ(৩০) প্রায় ৫টি ঘরে মানুষ বসবাস করলেও বাকী ঘরগুলি তালাবন্ধ দেখা গেছে।
এসময় মৃত হোসেন আলীর স্ত্রী সাহেরা বেওয়া(৬৫) অভিযোগের সুরে জানান, তিনি পাউবো বাধে আশ্রয় নিয়েছেন। তার নামে গুচ্ছ গ্রামে একটি ঘর বরাদ্দ রয়েছে অথচ তিনি কোন ঘরের দখল পাননি। অপরদিকে সোবানের স্ত্রী রাহেলার নামে ঘর বরাদ্দ না থাকলেও তিনি একটি ঘর জোড় পূর্বক দখল করে তালাবন্ধি করে রেখেছেন।
স্থানীয়রা জানান, গুচ্ছ গ্রামের মাটি ভরাট থেকে ঘর নির্মান পর্যন্ত অনিয়মের আশ্রয় নেয়ায় বছর না ফিরতেই বৃষ্টির পানিতে ধসে যাচ্ছে কোটি টাকা ব্যায়ে নবনির্মিত ওই গুচ্ছ গ্রামের ঘর।
প্রতিবন্ধি সরবানু বলেন, দুটি সন্তান নিয়ে গুচ্ছ গ্রামের একটি ঘরে বাস করেন তিনি। উঠান এবং ঘরের মেঝে প্রায় সমান হওয়ায় বৃষ্টি এলে ঘরের ভিতর পানি জমে থাকে,ফলে সন্তানদের নিয়ে থাকতে অসুবিধা হয় তার।
এবিষয়ে নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান মো.আবু হানিফা বলেন, ঘরগুলোতে মানুষ না থাকা পানিতে নিচের মাটি সরে গিয়ে ঘর পড়ে যাচ্ছে।
প্রকল্পবাস্তবায়ন অফিসার মো.কোহিনুর রহমান বলেন, গুচ্ছ গ্রামের চারিদিকে গাইড ওয়াল নির্মানসহ মেরামতের জন্য আনুমানিক ব্যয় পরিমাপ করে পিডি অফিসে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.মাহবুবুর রহমান বলেন, গুচ্ছ গ্রামের কাজ শেষ হয়েছে। ধসে যাওয়ার বিষয়টি প্রকল্প কার্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থায় সেভাবে যত্ন নেয়া হয় না।