বাংলার সংবাদ ডেস্ক ।। কক্সবাজার জেলায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে কক্সবাজার সদরসহ ৮টি উপজেলার বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানি ৫ থেকে ৬ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে শহরের গোদারপাড়া, কুতুবদিয়া পাড়া, ও সদর উপজেলার ঈদগাঁহ, চৌফলদন্ডী, পোকখালী, ঘোমাখালী, দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী, কুতুবদিয়া মাতারবাড়ী, পেকুয়া, সাবরাং ও সেন্টমার্টিনসহ বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বিভিন্ন গ্রাম এবং পানি বন্ধী হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, মাছের ঘের ও লবণ মাঠ। বিদ্ধস্ত হয়ে গেছে রাস্তা ঘাট ও কালবাট ও ব্রীজ।
পানিতে ঢুবে গেছে দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। জিও ব্যাগ ছিড়ে গিয়ে জোয়ারের তুড়ে উপড়ে গেছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈককতরে শত শত ঝাউবিথি। বিভিন্ন জায়গায় ভেঙ্গে গেছে ৮০ কি: মি: স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ সড়ক। তবে এ পর্যন্ত কোন হতাহতের খবর শোনা যায়নি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ জানান, দ্রত ক্ষতি নির্ণয় করে ত্রাণ ও খাদ্যসহয়তা কার্যক্রম শুরু করবেন তাঁরা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক তথ্য মতে, কক্সবাজার জেলায় ৫২.৫ হেক্টর শস্যক্ষেত্র এবং হ্যাচারি, মৎস্য, চিংড়িঘের, মৎস্য বিচরণ মিলে এখাতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৮৫.৬৪ হেক্টর। এছাড়া ১.৫ কি.মি বিদ্যুৎ লাইন, ২১.৫ কি.মি সড়ক, ৫.৩৬৫ কি.মি বাঁধ, ২৩ হেক্টর বনাঞ্চল, ৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ৫৪টি নলকূপ ও ২০৯৬ মে. টন লবণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়া জেলার ৭ উপজেলার ১৭ ইউনিয়নে ৯৩.৪৭৬ বর্গ কি.মি গ্রামাঞ্চল, ২১৮০টি খানা ও ৩৪৭০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আহত হয় একজন শিশু। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয়গ্রহণকারীর সংখ্যা ১৮,৭৪৭ জন। পশুপাখি মারা গেছে ৬৭৬টি।
গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ কক্সবাজারে আঘাত না হানলেও অতিপ্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে ৮ উপজেলার উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ, সাইক্লোন শেল্টার, চিংড়িঘের, খেতখামারের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সাগরের পানি বেড়েছে স্বাভাবিক চেয়ে প্রায় ৬ ফুট।
বেসরকারী তথ্য মতে, কক্সবাজার জেলায় তিন হাজারের বেশি বসতবাড়ি, স্থাপনা ক্ষতির শিকার। ভেসে গেছে চিংড়িঘেরের মাছ। সদরের ইসলামপুর, চৌফলদন্ডি ও পোকখালীর বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে পানিতে ডুবেছে ঘরবাড়ি। ক্ষতি হয়েছে লবণশিল্পের।
বিসিক কক্সবাজারের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর প্রভাবে কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া ও টেকনাফ এই ৫ উপজেলার ১৬ ইউনিয়নে ২০৯৬ মে.টন লবণের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সম্ভাব্য বাজারমূল্য গড়ে ১৬১ টাকা হিসেবে যার অর্থের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় অনুমান ৮৪ লাখ ৩৬ হাজার ৪০০ টাকা।
এদিকে, জোয়ারের পানির ধাক্কায় ভেঙে পড়ছে সেন্টমার্টিনের প্রধান জেটিঘাট। শাহপরীরদ্বীপ বাঁধের ব্লক সরে ঝুঁকিতে ৪০ হাজার মানুষ। শাহ্পরীর দ্বীপ জালিয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন আশ্রয় কেন্দ্রটি মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। জোয়ারের পানি উপড়ে পড়ছে ভবনটিতে। ভাঙন ধরেছে আশ্রয় কেন্দ্রের পল্টুনে ও রাস্তাঘাটে। যে কোন সময় সাগরে তলিয়ে যেতে পারে সরকারি সম্পদটি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেড়িবাঁধ ভেঙে কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডি, পোকখালী, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন দ্বীপের শতাধিক গ্রামে ঢুকে পড়েছে জোয়ারের পানি। কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়া, নুনিয়ারছড়া পানিরকুপপাড়া, গোদারপাড়াসহ অন্তত ৮টি এলাকায় ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ।
দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে প্রবল জোয়ারের পানিতে উপড়ে গেছে গাছপালা। ভাঙন ধরেছে জেটির পল্টুনে ও রাস্তাঘাটে। তবে মানুষের জানমাল রক্ষায় সব ধরণের প্রস্তুুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপে বেড়িবাঁধের ব্লকে ধস নেমেছে।
মাতারবাড়ির ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাস্টার মাহমদুল্লাহ জানিয়েছেন, জোয়ারের পানিতে মাতারবাড়ির ইউনিয়নের ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে পানি। ইতোমধ্যে ৫০ থেকে ৮০ টি ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে।
দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া থেকে বাসিন্দা ও স্থানীয় সংবাদকর্মী কায়সার সিকদার জানান, কুতুবদিয়ার উত্তর ধুরুং, আলী আকবরডেইল ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ ভেঙে ২০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে করে প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। একইভাবে মহেশখালীর ধলঘাটাসহ জেলার আরো বিভিন্ন নিন্ম এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।