বাংলার সংবাদ ডেস্ক ।। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দেশে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হচ্ছে। আগামী ২৭ জানুয়ারি (বুধবার} কুর্মিটোলা হাসপাতালের একজন নার্সের দেহে ভ্যাকসিন দেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে টিকা প্রদানের এ কর্মসূচি।
ওইদিন আরও ২৪ জনকে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। যাদের মধ্যে সিংহভাগই হলেন করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কাজ করা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী। অন্যদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক এবং সাংবাদিকও রয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে রাজধানীর পাঁচটি হাসপাতালে আগামী ২৮ জানুয়ারি থেকে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হবে। এগুলো হচ্ছে- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। এসব হাসপাতালে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। দেশের জেলাপর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রথম মাসে ৬০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, প্রথম মাসে ৬০ লাখ ডোজ দেওযার পরের মাসে দেওয়া হবে ৫০ লাখ ডোজ। এরপরের মাসে আবার ৬০ লাখ ডোজ, দ্বিতীয় ডোজ মেলানোর জন্য এভাবে দেওয়া হবে। পরের মাস থেকে আবার ৫০ লাখ করে দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ, অর্থাৎ ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জন মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা সরকার। মোট পাঁচ ধাপে এসব টিকা দেওয়া হবে। শুরুতে করোনা প্রতিরোধে সামনের সারিতে থেকে কাজ করা মানুষদের টিকা প্রদানে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য সেবায় সরাসরি নিয়োজিত সব ধরনের অনুমোদিত বেসরকারি ও প্রাইভেট মিলিয়ে ছয় লাখ স্বাস্থ্যকর্মী প্রথম ধাপেই টিকা পাবেন। এছাড়াও করোনা ভ্যাকসিনের অগ্রাধিকার তালিকায় আছেন ২ লাখ ১০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা,সামরিক ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৫৭ জন,রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ২৫ হাজার জন, সম্মুখসারির ২৫ হাজার জন গণমাধ্যমকর্মী, ৮৯ হাজার ১৪৯ জন জনপ্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভার ৭৫ হাজার জন কর্মচারী, মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত কর্মীদের মধ্যে ৩৭ হাজার ৫০০ জন প্রথম মাসে টিকা পাবেন।
করোনার ভ্যাকসিন সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় একটি বিশেষ অ্যাপ তৈরি করছে আইসিটি মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে প্রত্যেক ব্যক্তি, যিনি ভ্যাকসিন নিতে পারবেন, তিনি নিজেকে রেজিস্টার করবেন। সেখানে কিছু তথ্য দেওয়ার বিষয় আছে। যথাযথভাবে সেই তথ্য দিলেই রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাবে। পরে ওই ব্যক্তিকে একটি সময় ও জায়গা বলে দেওয়া হবে। সময়মতো সেখানে উপস্থিত হলেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত ভ্যাকসিন।
জনসাধারণের জন্য করোনার ভ্যাকসিন নিশ্চিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সুরক্ষা নামের একটি অ্যাপস খুলেছে। এটি গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপল স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে হবে।সুরক্ষা পোর্টাল বা অ্যাপসে গেলে একটি নিবন্ধন বাটন পাওয়া যাবে। নিবন্ধন বাটন চেপে টিকা নিতে ইচ্ছুক ব্যক্তি কোন শ্রেণিতে পড়েন তা নির্বাচন করবেন। সেখানে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, সঠিক জন্ম তারিখ দিতে হবে।
নিবন্ধনের সময় আবেদনকারীকে একটি মোবাইল নম্বর দিতে হবে যেখানে টিকা সম্পর্কিত সব তথ্য পাঠানো হবে। আবেদনকারী যে ঠিকানা নির্বাচন করবেন সেই অনুযায়ী তার টিকাদান কেন্দ্রের নাম আসবে।
পাশাপাশি সুরক্ষাডটজিওভিডটবিডি এই ঠিকানায় গিয়ে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল থেকে নিবন্ধন করা যাবে।