লিটন পাঠান, হবিগঞ্জ ।। আর মাত্র কয়েক দিন বাকি ঈদুল আযহার। তবে ঈদকে সামনে রেখে হবিগঞ্জের মাধবপুরে কামারশালায় নেই কোনো ব্যস্ততা। ক্রেতাদেরও তেমন কোন ভিড় দেখা যায়নি। যেখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কামারশালাগুলোতে টুংটাং শব্দ লেগেই থাকতো। বর্তমানে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে সরকারের কঠোর লকডাউন চললেও এখন শিথিল থাকার কারণে ক্রেতারা বাজারের দিকে ঝুঁকছে কম। এতে ক্রেতা পাওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন কামাররা।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল যেমন- চেঙ্গারবাজার, হরিশ্যামা, সুলতানপুর, ভান্ডারুয়া, শাহপুর প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতো ব্যস্ততা নেই কামারদের। লকডাউনের মধ্যে কয়েকটি কামারশালা খোলা থাকলেও, কাজ নেই। তবে স্বাভাবিক পরিবেশে এক মাস আগে থেকেই কামারশালায় হাতিয়ার বানানোর কাজ শুরু হতো। কামারশালার পাশ দিয়ে গেলেই শোনা যেত টুংটাং আর লোহা গরম করা ভাতির শব্দ। কিন্তু এবারের চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। উপজেলার প্রাণকেন্দ্র মাছ বাজার এলাকা, পৌর শহরের পশ্চিমে, শ্যামলী আবাসিক এলাকা, মাধবপুর মধ্য বাজার, কাটিয়ারা সহ বেশ কয়েকটি কামারশালা রয়েছে। সেখানে কামাররা দা, ছুরি, কোপতা তৈরির কাজ করেন। ঈদুল আযহা সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করতেন কামাররা। কিন্তু এখন তাদের হাতে কাজ নেই। কামারশালায় অলস সময় পার করছেন তারা।
সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে তারা জানান, মাধবপুর মধ্য বাজারের সুরেশ কর্মকার বলেন, ‘এ বছরও ব্যবসার সময়টাতে চলছে লকডাউন। ঈদ আসলে তাদের কাজের অনেক চাপ থাকতো, কিন্তু এবার তাদের তেমন কোন কাজ নেই। তিনি আরো বলেন, ‘ঈদের এক মাস আগে থেকেই দা, ছুরি, বটি, চাপাতিসহ নানা হাতিয়ার তৈরি করা শুরু হতো। গত বছর এসময় বিভিন্ন হাতিয়ার বিক্রি করে দৈনিক ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা সেল হতো। এখন দৈনিক ৫শ টাকারও হাতিয়ার বিক্রি হয়না। নেই কাজের ব্যস্ততা।
সেই সঙ্গে কামারশালার সামনে বিক্রি করার জন্য সাজানো থাকতো পশু কোরবানির বিভিন্ন সরঞ্জাম আর বিক্রি শুরু হতো এক সপ্তাহ আগে থেকেই। কিন্তু এ বছর তেমন ক্রেতাও নেই, তাই কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। লকডাউন শিথিল থাকায়ও আর্থিক সংকটে সবাই গরু কোরবানি দিতে পারছেন না। ফলে কাজ অর্ধেকে নেমে এসেছে, এতে করে কোনোরকমে চলছে তার কামারশালা।’ সুলতানপুর গ্রামের চুনি লাল কর্মকার জানালেন, ‘কোরবানির আগের মাস থেকেই ব্যবসা চাঙ্গা হতো। কিন্তু এ বছর তাদের কাজে কোন ব্যস্ততা নেই।
তিনি আরো বলেন, জিনিসপত্রের দামও বেড়ে গেছে, তার আগে থেকেই হাতিয়ার তৈরি করতে সাহস পাওয়া যাচ্ছে না। ভাতি ব্যবহারে কয়লা মজুদ করে রাখতে হতো, এবার সেটি নেই। তিনি আরো বলেন, দা ও বটি বানাতে ৬০০, বড় ছুরি ৬৫০ টাকা, শান দেওয়ার মজুরি প্রকার ভেদে ৮০ ও ১০০টাকা নেওয়া হচ্ছে। তবে তারা এবছর প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেন।’ হরিশ্যামা গ্রামের ধনু মিয়া জানান, গত কয়েক বছরেও তিনি একা গরু কোরবানি দিতেন। কিন্তু এ বছর লকডাউনের কারণে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে তিনি এবার একা কোরবানি দিতে পারছেন না। তাই তিনি আরো কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে গরু কোরবানি দিবেন।
এ ব্যাপারে মাধবপুর প্রেসক্লাবের সেক্রেটারী সাংবাদিক সাব্বির হাসান জানান, গত কয়েকদিন টানা লকডাউনের কারণে অনেকেই ব্যবসা ঠিক মতো করতে পারছে না। এমনকি করোনাকালীন সময়ে সরকারি নির্দেশনা মেনে অনেকেই বাজারমুখী হতে না পারায় এবার তারা কোরবানি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে তারা অনেকেই জানান, এ বছর আর্থিক সংকটের কারণে যৌথভাবে কোরবানি দিতে আগ্রহী প্রকাশ করেছেন।