# ১১ নভেম্বর এসএসসি ও ২ ডিসেম্বর এইচএসসি অনুষ্ঠিত # বিভাগওয়ারি ঐচ্ছিক বিষয়গুলোর ওপর পরীক্ষা নেওয়া হবে # এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই ফল প্রকাশ#
দেড় বছর পর অবশেষে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এ পরীক্ষা আগামী ১১ নভেম্বরে এসএসসি ও ২ ডিসেম্বর থেকে এইচএসসি অনুষ্ঠিত হবে। শুধুমাত্র ঐচ্ছিক বিষয়ের ওপর পরীক্ষা হবে এই খবরে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে। এসএসসিতে ২৩ লাখ এবং এইচএসসিতে ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করছে। এবার বিভাগওয়ারি শুধু ঐচ্ছিক বিষয়গুলোর পরীক্ষা নেওয়া হবে। আবশ্যিক বিষয়গুলোর কোন পরীক্ষা হচ্ছে না। অর্থাৎ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা শুধু ‘ঐচ্ছিক’ অর্থাৎ বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর পরীক্ষায় অংশ নেবে ঠিক তেমনি মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা শুধু তাদের ‘ঐচ্ছিক’ বিষয়গুলোর পরীক্ষায় অংশ নেবে। এ ক্ষেত্রে আবশ্যিক অর্থাৎ বাংলা, ইংরেজি ও ধর্ম- এ জাতীয় বিষয়ের পরীক্ষা হচ্ছে না।
এ বিষয়ক রুটিনটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে দু-এক দিনের মধ্যেই পরীক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত ‘গাইডলাইন’ প্রকাশ করবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। অর্থাৎ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। পরীক্ষা নেওয়ার এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই ফল প্রকাশের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সময় স্বল্পতার কারণে এই দুই পরীক্ষায় এবার প্রায় অর্ধেক বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হবে। এই সূচি ধরে একটি সম্ভাব্য রুটিন চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে পাঠানো হয়েছে বলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ভোরের পাতাকে জানিয়েছেন।
নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসব্যাপী দুই পাবলিক পরীক্ষার সূচি থাকায় এবার অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং মাদরাসার জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা হচ্ছে না। এই দুই পরীক্ষা নিয়ে সারা দেশের স্কুল-কলেজগুলো বছরের শেষের দুই মাস ব্যস্ত সময় পার করবে। এ কারণে এবার পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাও (পিইসিই) হচ্ছে না বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সাধারণত নভেম্বরের শুরুতে জেএসসি ও জেডিসি এবং একইমাসের শেষের দিকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেওয়া হয়। ২০১১ সাল থেকে এই দুই পরীক্ষা শুরু হয়। যদিও ২০১০ সালে প্রণীত শিক্ষা নীতিতে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাবলিক পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে কোন সুপারিশ ছিল না।
শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘অটোপাস’ ‘নামমাত্র’ পরীক্ষাÑএই খবরে এবার নিবন্ধনকারীদের প্রায় সবাই ‘ফরম পূরণ’ করেছে। পাশাপাশি অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের বেশির ভাগই এবারও ‘ফরম পূরণ’ করেছে। করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। গত ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। করোনা সংক্রমণের আগে গত বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেওয়া গেলেও এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ জন্য এসএসসি এবং অষ্টম শ্রেণির জেএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হয়। এতে প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়।
শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবার প্রায় ২৩ লাখ শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। গত বছর এই পরীক্ষায় ২০ লাখ ৪০ হাজার ২৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। এ হিসেবে এবার প্রায় আড়াই লাখ পরীক্ষার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এবং মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে গত ১৯ আগস্ট পর্যন্ত মোট পরীক্ষার্থী ২১ লাখ পাঁচ হাজার ১২৫ জন। কারিগরির পরীক্ষার্থীসহ (এসএসসি ভোকেশনাল) মোট পরীক্ষার্থী প্রায় ২৩ লাখ। এর মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষার্থী ১৮ লাখ তিন হাজার ৩৭৩ জন। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ঢাকা বোর্ডে ৪ লাখ ৭১ হাজার ৮২২ জন, রাজশাহীতে দুই লাখ সাত হাজার ৬৪৭ জন, কুমিল্লায় দুই লাখ ২২ হাজার ৬৪৮ জন, যশোরে ১ লাখ ৮১ হাজার ১৮৫ জন, চট্টগ্রামে ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৯২ জন, বরিশালে এক লাখ ১৪ হাজার ৪৯২ জন, সিলেটে এক লাখ ২০ হাজার ৯৩৯ জন, দিনাজপুরে এক লাখ ৯৩ হাজার ৪৪৬ জন ও ময়মনসিংহ বোর্ডে ১ লাখ ৩০ হাজার ৭০২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি সমমানের দাখিল পরীক্ষায় তিন লাখ এক হাজার ৭৫২ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফরম পূরণের কার্যক্রম এখনও শেষ হয়নি।
সর্বশেষ বর্ধিত সূচি অনুযায়ী, ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফরম পূরণের সুযোগ রয়েছে। এ কারণে এখন পর্যন্ত এই স্তরের পরীক্ষার্থীর চূড়ান্ত সংখ্যা এখনও নির্ণয় হয়নি। তবে গত সপ্তাহে পর্যন্ত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছে ১৪ লাখ ৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। গত বছর এই পরীক্ষায় ফরম পূরণ করেছিল ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এবার ঢাকা বোর্ডে ফরম পূরণ করেছে ৩ লাখ ৭ হাজার ৪৭৮ জন। অন্যান্য সাধারণ বোর্ডের মধ্যে বরিশাল বোর্ডে ৬৬ হাজার ৯৭৮ জন, চট্টগ্রামে ৯৬ হাজার ৮১২ জন, কুমিল্লায় ১ লাখ ১৪ হাজার ৭১১ জন, দিনাজপুরে ১ লাখ ১৩ হাজার ৩০৬ জন, যশোরে ১ লাখ ২৮ হাজার ৪৫৬ জন, রাজশাহীতে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪৬৯ জন, সিলেটে ৬৬ হাজার ১০১ জন এবং ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে ৬৯ হাজার ৩০৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছে। এছাড়া মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে এক লাখ ১১ হাজার ১৩৭ ও কারিগরি শিক্ষা ঢাকা বোর্ডে ফরম পূরণ করেছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৩০৫ জন।